Skip to main content
ঘটনার শুরু আজ থেকে চার বছরআগে এক রাতে। আমি সিলেট
এর ওসমানী মেডিকেল এ একটা সেমিনার শেষ করে নিজেই
ড্রাইভ করে ফিরছিলাম ঢাকায়। সাধারণত আমার পাজেরো
টা আমার খুব প্রিয় হওয়াতে আমি কাউকে ড্রাইভার
রাখিনি। সেদিন ও আমি নিজেই চালিয়ে নিয়ে আসছিলাম
ঢাকার উদ্দেশ্যে। পথে খানিক টা ঘুম ঘুম ভাব আসলেও মন টা
সতেজ ছিল- কারন সেই সেমিনারে আমি আমার গবেষনার
জন্য পেয়েছি প্রচুর হাততালি। সাংবাদিক রা ফটাফট ছবি
তুলে নিয়েছিল আমার। পরদিন পত্রিকায় আমার ছবি সহ লিড
নিউজ ও হবার কথা ই ছিল এবং হয়েছিল ও তাই। আমি একটা
বিশেষ হার্ট সার্জারি আবিষ্কার করেছিলাম- যেটা আজ
পৃথিবীর সব দেশে দেশে রোগীদের জীবন বাঁচাচ্ছে-
মানুষকে স্বপ্নদেখাচ্ছে নতুন জীবনের।সেমিনারের সফলতা
তাই জুড়ে ছিল আমার মনে প্রানে।
রাস্তায় যেতে যেতে সেদিন আমি গান শুনছিলাম। গানের
তালে তালে ধীর গতিতে গাড়ি চালাই আমি। বেশি গতি
আমি কখনোই তুলিনা।সেদিন ও ৫০ এরকাছাকাছি গতিতে
গাড়ি চালাচ্ছিলাম। সিলেট থেকে রওনা দিয়ে উজানভাটি
এলাকার কাছাকাছি আসতেই হটাত করে আমার সামনে এক
সাদা পাঞ্জাবি পড়া বৃদ্ধ লোক এসেদাঁড়ায়। রাত তখন প্রায়
দুইটা। এই সময় রাস্তায় হাইওয়ের গাড়ি গুলো ছাড়া
কোনযানবাহন ও ছিলনা।হটাত করে আমার সামনে কোত্থেকে
লোকটা এসে পড়ল কিছু বুঝে ওঠার আগেই। আমি ও
লোকটাকে বাঁচাতে গিয়ে ও পারলাম না। সোজা সেই
লোকের ঊপর চালাতে বাধ্য হলাম। আর সেখানেই গাড়ির
সামনের অংশে বাড়ি খেয়ে লোকটা ছিটকে পড়ল হাত
পাঁচেক দূরে। আমি হার্ড ব্রেক কষে সেইবৃদ্ধের কাছে ছুটে
গেলাম। কিন্তু ততক্ষনে সব শেষ। মাথার কাছটায় আঘাতে
মৃত্যু বরন করেছে বৃদ্ধ ততক্ষনে। জীবনে ও আমি কোন দিন
এক্সিডেন্ট করিনি।সেটাই ছিল আমার প্রথম এক্সিডেন্ট।
আমি দিশেহারা হয়ে যাই। কিভাবে কি করব বুঝে ঊঠতে না
পেরে কিছুক্ষনঝিম মেরে থাকলাম সেখানেই। তারপর বৃদ্ধকে
গাড়িতে তুললাম। পাশে বসিয়ে আবার ড্রাইভ করলাম ঢাকার
উদ্দেশ্যে।
ঢাকায় পৌছে সোজা মেডিক্যাল এ নিয়ে গেলাম লাশ
টাকে। সেখানে গিয়েই পুলিশ কে জানানো হল। পুলিশ এসে
আমার কাছ থেকে জবানবন্ধি নিয়ে লাশ টা থানায় নিয়ে
গেল।আমিপ্রথমে ঠিক করেছিলাম পুলিশ কে সব খুলে বলব।
কিন্তু পরেকি ভেবে যেন আমি মিথ্যে বলি।। পুলিশ ও আমার
কথা গুলোকোন রকম সন্দেহ ছাড়াই বিশ্বাস করে। নিজের
কাছে আমি কিছু টা অপরাধী বোধ করলে ও নিজের ইমেজ
বাঁচাতে এই মিথ্যেটা আমাকে বলতেই হয়েছে।
তারপর কেটে গেছে অনেক গুলো মাস। আমি আমার আবিষ্কৃত
প্যারা সার্জারি সিস্টেম এর জন্য অনেক গুলো পুরষ্কারও
পাই। খ্যাতি আর অর্থ দুটোই এসে ধরা দেয় আমাকে। ধীরে
ধীরে নিজের উপর আত্মবিশ্বাস বেড়ে চলে আমার। নিজেকে
কিছুটা ঈশ্বরের সমপর্যায়ের ভাবতে থাকি। এরজন্য মিডিয়া
ও কম দায়ী নয়।খবরের পাতায় কারো না কারো জীবন
বাঁচানোর জন্যআমি ঊঠে আসতে থাকি নিয়মিত ভাবে। ধীরে
ধীরে আমি অনেক অনেক বেশী অহংকারী হয়ে ঊঠি।
কাউকেই পরোয়া না করার একটা ভাব চলে আসে আমার
মাঝে। মানুষ কে আমি মনে করতে শুরুকরি হাতের পুতুল। আমি
চাইলেই যেকোন মৃত্যু পথযাত্রীর জীবন বাচিয়ে দিতে
পারতাম। এই জন্য আমার কাছেই ছুটে আসতে লাগল হাজারো
মানুষ। এই যশ আর খ্যাতি যখন তুঙ্গে তখন আমারকাছেই রুগী
হয়ে আসেন বাংলাদেশের প্রথিত যশা রাজনীতিবিদ
রেজোয়ানুল হক। আমি বাকি সবার মত উনাকেও আস্বস্থ
করেছিলাম যে উনার কিছু ই হবেনা।
যেদিন উনার অপারেশন – সেদিন আমি আরো দুটি হার্ট
অপারেশন করে ফেলেছিলাম। তাই কিছু টা ক্লান্তি ছিল।
একটানা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপারেশন গুলো করতে হয়। তাই
ক্লান্তি ভর করে সহজেই। আমিক্লান্ত থাকলে ও মনে মনে
পুলকিত ছিলাম কারন এর পরেই আমি রেজোয়ানুল হকের
অপারেশন করবো।উনাকে যখন অজ্ঞান করা হল তখন আমি
নিজের কস্টিউম পড়ছি। জুনিয়র ডাক্তার কে দিয়েই এগুলো
করাই আমি। আমি শুধু গিয়ে কাটাকাটির কাজ টা করি।
সেদিন ও জুনিয়র তিনজন ডাক্তার মিলে সব প্রয়োজনীয়
ব্যাবস্থা সেরে আমাকে কল দিল। আমি ও গেলাম। আর
গিয়েইশুরু করলাম অপারেশন। ওপেন হার্ট সার্জারি ছিল
সেটা। আমি যখন সব কেটে কুটে মাত্রহার্ট টাকে দেখতে
লাগলাম এমন সময় আমার চোখ গেল ওটি রুমের বাম কোনায়।
সেখানে আমার দিকে তাকিয়ে বসে আছে সেই বৃদ্ধ। আমি
দেখে চোখের পলক ফেলতেই দেখি উনি নেই। হ্যালুসিনেশন
মনে করে আবার অপারেশন শুরু করলাম। রেজোয়ানুল হকের
হার্ট এর নিলয় এর দুটো শিরায় চর্বি জমেছিল। আমি সেগুলো
পরিষ্কার করতে করতে হটাত করে কানের কাছে একটা
কাশির শব্দ শুনলাম। প্রথমে পাত্তা দিলাম না।না। কারন
এইখানে কোন ভুল হলেই রোগী মারা যাবেন। আমার কোন
রকম ভুলের কারনে এতবড় মানুষ টারমৃত্যু হবে ভেবে আমি
আবার মনযোগ দিলাম। কিন্তু আবার কাশির শব্দ আসল।
কাশিটা আসছিল বাম দিক থেকে। আমি বামে মাথা ঘুরিয়ে
দেখি বৃদ্ধ হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ঠোট
নাড়ারআগেই বলে ঊঠল –
“বাবাজি তুমি তো উনাকে বাঁচাতে পারবানা”
আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি আকাশ পাতাল চিন্তা করে
চলেছি। একজন মৃত মানুষ কিভাবে আমার পাশে এসে দাড়াতে
পারে সেটাই মাথায় আসছিল না। আমি কোন উত্তর দেবার
আগেই সেই লোকটি বলল-
“ কি বুঝতে পারছো নাতো? শোনো- আমি জানি তুমি অনেক
চেষ্টা করবে উনাকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু পারবেনা”-
বলেই আবার হেসে দিল সাদা পাঞ্জাবি পড়া বৃদ্ধ।
আমি বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছি উনার দিকে। কি বলব বুঝতে
পারছিনা। উনাকে কি বলবো বুঝতে বুঝতে কাটিয়ে দিলাম
পাঁচ সেকেন্ড। তারপর আবার মনযোগ দিলাম অপারেশনে।
রোগীর অপারেশন সাকসেস হল। আমি ও হাপ ছেড়ে বাঁচলাম।
সেলাই করে দিয়ে শেষ বার ড্রেস করতে দিয়ে আমি মাস্ক
খুলতে যাব এমন সময় হটাত করেরোগীর পালস রেট গেল
বেড়ে। মেশিন গুলো যেন চিৎকার শুরুকরে দিয়েছে।
হটাত করে বুকের ভেতর ধপধপ করা শুরু করল। আমি
তাড়াতাড়িগিয়ে রোগীর প্রেশার দেখলাম- বেড়েই চলেছে
প্রেশার। হটাত করে এই অবস্থা হবার কথা না। আমি কয়েকজন
ডাক্তারকে বললাম প্রেশারের ইনজেকশন দিতে। ওরা সেটা
দিতেই প্রেশার ডাউন হওয়া শুরু করল। কিন্তুআবার ও
বিপত্তি। এবার প্রেশার কমতে লাগল। আমি আবার টেনশনে
পড়ে গেলাম। কিন্তু কোনভাবেই কিছু করতে পারলাম না।
রোগীর হার্ট বিটভয়ানক ভাবে কমতে কমতে একেবারে শুন্য
হয়ে গেল নিমিশে। এবং আমি তাকিয়ে তাকিয়ে রেজয়ানুল
হকের মরে যাওয়া দেখলাম।
চলবে
মোঃ ইউসুফ

Comments

Popular posts from this blog

ভালবাসার সঙ্গা:-

ভালোবাসার সংজ্ঞা দিয়েছেন বিভিন্ন দার্শনিক বিভিন্ন ভাবে । ব্যক্তি ভেদে এই সংজ্ঞা বদলে যায় , যেমন বিখ্যাত গণিতবিদ পীথাগোরাস কে আমরা সবাই কম-বেশি চিনি। একবার কোন এক “ ভালোবাসা দিবস” এ এক লোক পীথাগোরাস কে জিজ্ঞেশ করেছিল, আপনার কাছে ভালবাসা’র সংজ্ঞা কী হতে পারে? পীথাগোরাস কোনো কথা না বলে খাতা-কলম নিয়ে বসে পরলো। তারপর কিছুক্ষন পর বলল, আমার কাছে ভালবাসা হচ্ছে ২২০ এবং ২৮৪ এর উৎপাদক ।তখন লোকটি বলল , কীভাবে? পীথাগোরাস বলল , ২২০ এর উৎপাদক হলো ১,২,৪,৫,১০,১১,২০,২২,৪৪,৫৫,১১০ এবং ২৮৪ এর উৎপাদক হলো ১,২,৪,৭১,১৪২ এখন আপনি যদি ২২০ এর উৎপাদক গুলোকে যোগ করেন তাহলে যোগফল হবে ২৮৪ (১+২+৪+৫+১০+১১+২০+২২+৪৪+৫৫+১১০=২৮৪) এবং ২৮৪ এর উৎপাদক গুলোকে যোগ করেন তাহলে যোগফল হবে ২২০ (১+২+৪+৭১+১৪২=২২০) কী! মজার না? আবার দেখুন আমাদের দেশের কবি রফিক আজাদের একটা কবিতা আছে, "ভালোবাসার সংজ্ঞা" ভালোবাসা মানে দুজনের পাগলামি, পরস্পরকে হৃদয়ের কাছে টানা; ভালোবাসা মানে জীবনের ঝুঁকি নেয়া, বিরহ-বালুতে খালিপায়ে হাঁটাহাঁটি; ভালোবাসা মানে একে অপরের প্রতি খুব করে ঝুঁকে থাকা; ভালোবাসা মানে ব্যাপক বৃষ্টি, বৃষ্

আমি নিজের চোখকে বিস্বাস করাতে পারছিলামনা।

আমি নিজের চোখকে বিস্বাস করাতে পারছিলামনা। - রাইসাঃ কি তুমার বিস্বাস হচ্ছেনা,আমি তুমার সামনে?? - আমিঃ তুমাকে কি আমি স্পর্শ করে দেখতে পারি? - রাইসাঃ আমি কি তুমাকে নিষেদ করেছি! - আমি আমার হাতটা রাইসার হাতের উপরে রাখলাম,আমার ভিতরে অজানা একটা ভাল লাগা কাজ করলো,বুকের ভিতরটা মোচর দিয়ে উঠলো! - এরি নাম হয়তো ভালবাসা! - আমি শুধু মুগ্ধ হয়ে রাইসাকে দেখছি।। - কখন যে সময় পেরিয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না।।।হঠাৎ রাইসার ডাকে আমার হুশ্ ফিরলো! - রাইসাঃএখন আমাকে যেতে হবে শাকিল। - আমিঃ কেন?আরেকটু থাকোনা! - রাইসাঃ না একটু পরে আযান হবে,আমি আর থাকতে পারবনা, দিনের আলো আমি একদম সহ্য করতে পারিনা।আমি যাচ্ছি ভাল থেকো। রাইসা চলে গেলো। - ঘরটা আগের মতো আবার অন্ধকার হয়ে গেলো।শুধু একটা মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছি! - - তার পর বেশ কিছুদিন কেঁটে গেলো,রাইসা আমাকে কল করছে না,দেখা করতেও আসছেনা।। - ভাবলাম ও হয়তো আমাকে ভুলে গেছে! মনের অজান্তেই কখন রাইসাকে আমি ভালবেসে ফেলেছি,জানিনা। - খুব কষ্ট হচ্ছিলো! রাইসাকে ছাড়া আর কোন কিছু ভাবতে পারছিনা আমি। হোক না সে অন্য কোন জাতি!আমি তু তাকে ভালবাসি আর ভালবাসা
ছেলেরা মাসে ৭০০০ টাকা বেতনে চাকরী করে!বাবার জন্য ১০০০,!মা'র জন্য ১০০০,!বউয়ের জন্য ১০০০ টাকা!ফেমিলি চালানোর ২০০০ বিকাশ করেও! দিব্যি ২০০০ টাকায় মাস চালিয়ে নিতেজানে। মাসে ৭০০০ টাকা মাইনের ছেলেটা বেতন পেয়ে! বউয়ের কাছে ফোনে বলতে জানে " ওগো তোমার জন্য কিপাঠাবো? " সামান্য বেতন পাওয়া যে ছেলেটা নিজের পুরনোজুতো বদলাবে বলে ঠিক করেছে , সেই ছেলেটাইমার্কেটে গিয়ে বউ আর বাবুর জন্য জুতো কিনে নিজের ছেঁড়াজুতো সেলাই করেমাসের পর মাস পড়তেজানে। উপোস পেটে কাজে গিয়েও মাকে বলতে জানে'আমি মাছ দিয়ে ভাত খেয়েছি তোমরা খেয়েছোতো', ১০৩ ডিগ্রী জ্বর নিয়ে কাজে গিয়েও বাবাকে বলে 'আমি অনেক ভাল আছি তোমরা ভাল আছোতো? নিজের পকেট ফাঁকা জেনেও বউকে বলে ' একটু ধৈর্য্য ধরো সামনের মাসে তোমার জন্য একজোড়া বালা কিনেদিব।