yousufhossain985.blogspot.com
শেভিংফোম গালে মেখে রেজার ঠেকিয়ে ভাবছি..
টান কি দেবো..? নাকি দেবো না..?! রমজানের এই
এক মাসে দাড়িগুলোর প্রতি মায়া জন্মে গিয়েছে।
এদিকে ঈদের দুইদিন পর আমার বিয়ে! রোজার আগে
রিয়া নামের মেয়েটিকে আংটি পড়িয়ে এসেছি।
এরেঞ্জ বিয়ে। সব দিকদিয়েই ঠিকঠাক তবে
মেয়েটা একটু বেশিই স্মার্ট। হাফ ইঞ্চি লম্বা দাড়ি
আমার চেহারাটাই পালটে দিয়েছে। এটা কি রিয়া
মেনে নেবে!? ভাবতে ভাবতে মুখে ঝপাস করে এক
চিলতে পানি দিয়ে সব ধুয়ে মুছে ফেললাম। ফাইনাল
সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম..
যেভাবেই আছে এভাবেই থাক, যা হওয়ার হবে,
মেয়ের জন্য দাড়ি কেটে ফেলাটা অন্যায় হয়েযাবে।
মনেমনে যা ভেবেছিলাম তাই হলো... ঈদের দিন
ভিডিওকলে কথা বলতে গিয়ে সে আমার দিকে হা
করে তাকিয়ে আছে...
--- ঐ মিয়া! আপনে কে?
--- তোমার হবু স্বামী(হেসে দেই)
--- রোজাতো শেষ, আজকে ঈদের দিন! আপনি দাড়ি
কাটেননি এখনো! পরশুদিন না আপনার বিয়ে!?
--- হুম,,, তো?
--- তো.. মানে কি...! এভাবে বিয়ে করবেননাকি?!
--- হুমমম
--- অসম্ভব! ইম্পসিবল! এক্ষুনি শেভ করে আসেন। কেমন
অদ্ভুত! মুখের উপর না করে দিতে কেমন যেন ভয় ভয়
লাগছিলো, আচ্ছা দেখি... এটা সেটা বলেটপিকটা
ঘুরিয়ে ফেলি।
মেয়েটাও ভেবে নেয় আমি ফান করেছি তার সাথে।
তাই এটা নিয়ে আর কোনো কথা বলেনি। বিয়ের দিন
যখন এই অবস্থায় আমাকে সামনাসামনি দেখলো.. বউ
সাজে সে তখন রাগে দাঁতেদাঁত খিটমিট করে আমার
দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমিও খেয়াল করেছি তার
ফ্রেন্ড ও কাজিনরা হাসাহাসি করেছিলো আমাকে
নিয়ে। আমিও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ওইসবে
পাত্তা দেয় নি। রোজার আগের রাফি আর এখনকার
রাফির মধ্যে অনেক তফাৎ। আগে নামাজ বলতে শুধু
সাপ্তাহিক হাজিরা দিয়ে আসতাম! আর এখন পাঁচ
ওয়াক্তই মসজিদে টাইম টু টাইমহাজির হয়ে যাই।
বিয়ের পর রিয়া এই নিয়ে ঝামেলা করবে জানতাম
কিন্তু এতটা করবে বুঝতে পারিনি। মেয়েটা বাসর
রাতে আমার সাথে একটা কথাও বলেনি! হাতটা
পর্যন্ত ধরার সুযোগ দেয়নি। তার মুখে কথা একটাই
শেষ পর্যন্ত হজুরকে বিয়ে করলাম! নামাজ পড়ুক ভাল
কথা এই বয়সে এসব দাড়ি পাঞ্জাবী কেন! তার
ফ্রেন্ডরা নাকি হাসবে।
বিয়ের সাত দিন পর কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়ার ডেট।
রিয়ার মামা ট্রাভেল প্যাকেজ গিফট দিয়েছিলো।
টাইম চলে যাবে। এদিকে রিয়ার সাথে আমার
সম্পর্কের কোনো উন্নতি হয়নি। তবুও মামার
জোরাজুরিতে রিয়াও যেতে বাধ্য হয়ে যায়।
ব্যাগপত্র গুছিয়ে নেই। যাওয়ার সময় রিয়া আরেকটা
সমস্যার সম্মুখীন হয়। আমার মা তার জন্য বোরখা
হিজাব নিয়ে এসেছেন। তাকে সেটা পড়ে নিতে
বলে। নতুন বউ শাশুড়ির মুখে
মুখে কথা বলার অভ্যাস তখনো হয় নি। রিয়া কিছুটা
আমতাআমতা করে যাচ্ছিলো। মা বলে দেয়.. এগুলা
তোমার অভ্যাস করতে হবে.. বাড়ির বৌ তুমি, এভাবে
খোলামেলা ভাবে ঘুরাফেরা করা যাবে না। আমার
ছোট বোন এসে তাকে সুন্দর করে হিজাব পড়িয়ে
দেয়। রিয়া কিছুক্ষণ পরপর বড় বড় চোখ নিয়ে আমার
দিকে তাকাচ্ছে। মুখে কিছু না বললেও তার চোখের
ভাষা আমি স্পষ্ট বুঝে নিচ্ছিলাম, সে চোখেচোখে
বলে
যাচ্ছিলো.. এগুলো করতে হবে তাকে বিয়ের আগে
বলা হয় নি কেন!
রাতের বাসে উঠেপড়ি দুজন। আমার প্রতি রাগ আরো
দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে। আমার মনেমনে শুধু বিশ্বাস
ছিলো একদিন ঠিকই ভালোমন্দ সে বুঝতে পারবে।
আমিও এযুগেরই ছেলে, আমিও রিয়ার মতই স্মার্ট
ভাবে চলাফেরা করতাম, আমি যেহেতু আলোকিত
পথে চলে এসেছি.. রিয়াও আসবে। রিয়া এমনেতে
খারাপ টাইপের মেয়ে না। ভদ্র ফ্যামিলির লক্ষী
একটা মেয়ে, কোনো ছেলে নিয়ে ঘুরাফেরা কিংবা
বাজে
অভ্যাস ওর মাঝে ছিলো না। আসলে হুট করে এসব
পরিবর্তন তার সহ্য হচ্ছেনা।
বাস চলছে হাই রোড দিয়ে... তখন সম্ভবত চট্টগ্রামের
কাছাকাছি। বাস হঠাৎ কড়া ব্রেক চেপে থেমে যায়।
সুপারভাইজার বাসের দরজাটা খুলতেই এক ধাক্কায়
চার পাঁচজন উগ্র টাইপের লোক বাসে উঠে আসে।
এরা সাধারণ কেউ না, এরা ডাকাত! হাতে ধারালো
চাকু আর আগ্নেয়াস্ত্র! সবাই কিছু বুঝে উঠার আগেই
হুংকার দিয়ে উঠে একদম চোপ! কোনো শব্দ না! এসি
বাস, জানালা এমনেতেই বন্ধ, তারা পর্দাটা
ঠিকঠাক ভাবে টেনে দেয়। আর বলে দেয় যার যা
কিছু আছে সব বের করে সামনে রাখ, একটা আওয়াজ
বের হবে একটা করে লাশ পড়বে! সবাই চুপ হয়ে যায়।
রিয়া শক্ত করে আমার হাতটা ধরে রাখে। আগে
কখনওই আমি রিয়ার স্পর্শ পাইনি, সেটাই ছিলো
প্রথম!
উগ্র লোকেরা যার যা কিছু চোখে পড়ছে ব্যাগে তুলে
নিচ্ছে। মোবাইল অলংকার সেচ্ছায় বের করে দিচ্ছে
তবুও তাদের মন ভরেনি। সার্চ করে করে টাকা
পয়সাও নিয়ে নিচ্ছে। সেই সাথে অকথ্য ভাষায়
নারীদের কথা শোনাচ্ছে। এরাতো মানুষনা, পশু বলে
কথা... সার্চ করার অজুহাতে দু সেকেন্ডের জন্য
হলেও মেয়েদের গায়ে হাত দিতে পিছপা হয় নি!
বিশেষ করে চোখের সামনে যেসব মেয়েরা সৌন্দর্য
প্রদর্শন করে
ছিলো.. যারা তাদের নজর কেড়ে নিয়েছে তারাই
প্রকাশ্যে সেদিন লাঞ্ছিত হয়েছে।
এগিয়ে আসছে আমাদের সিটের দিকে.. রিয়ার
হাতটা থরথর করে কাঁপছে। সেই মুহূর্তটাতে আমার
ভিতরে কলিজাটা চিৎকার দিয়ে বলে যাচ্ছিলো.. ও
আমার.. ও আমার.. ওকে কেউ স্পর্শ করবে না.. ও শুধু
আমার। আল্লাহ্ প্লিজ আমাদের হেফাজত করেন।
সেই লোকগুলো কাছে আসে। আমার মোবাইলটা
কেড়ে নেয়। অনেকটা ভদ্র ভাবেই বলে.. গেঞ্জাম
কইরেন না যা আছে বের করে দেন। পকেটাথাকা
মানিব্যাগ দিয়ে দিলাম। রিয়ার দিকে তাকালো...
আমার বুকটা তখন ধুকবুক করছিলো। একজন বলে উঠে...
আফা নাকফুলটা খুলে দেন।। রিয়া খুলে আমার হাতে
দেয়, আমি তাদের দিয়ে দেই। আমাদের আর কিছু না
বলে তারা পিছনের দিকে এগিয়ে যায়! আত্মাটা
কিছুটা হলেও ঠান্ডা হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর তারা
বাস থেকে নেমে যায়। সেদিন তারা ভদ্র আচরণ একটু
হলেও যদি দেখিয়ে থাকে সেটা আমাদের সাথেই
দেখানো হয়েছিলো। সবার সাথে তুই করে কথা
বললেও
আমাদের কাছে এসে আপনি ব্যাবহার করেছিলো!
আমাদের সাথেই কেন? আমরা কি কোনো মন্ত্রীর
ছেলে
মেয়ে ছিলাম? নাকি সম্মানিত কোনো ব্যক্তি?
মোটেও তেমন কিছুই নাহ... তবে আমাদের
পোশাকপরিচ্ছদ
ছিলো সম্মানের। যা সেদিন আমাদের মান সম্মান
রক্ষাতে অনেক ভূমিকা রেখেছিলো। বাসে যে কয়টা
যুবতী মেয়ে ছিলো তার থেকে আমার বউটাই ছিলো
সবচেয়ে সুন্দরী ও স্মার্ট.. অথচ তার সাথে
সম্মানহানিকর কিছুই ঘটে নি। তাকে তারা এড়িয়ে
গিয়েছিলো। কারণ তার সৌন্দর্যটা তাদের চোখের
আড়ালে ঢাকা পড়ে ছিলো। তার রূপ লাবণ্য সেদিন
তার স্বামীর জন্য সংরক্ষিত হয়ে ছিলো। তাই আজ
সে
সুরক্ষিত।
বাকিটা পথ সে আমার হাতটা ধরেই ছিলো। এক
সেকেন্ডের জন্যেও আমার হাতটা ছাড়েনি। রিয়ার
মনের ভুলটা ভেঙে গিয়েছে, সে নিজ চোখে দেখে
নিয়েছে ধার্মিক লেবাসে চলাফেরা শুধু পরকাল নয়
দুনিয়াতেও
কতটা কল্যাণময়ী। এভাবেই আলোকিত পথে থাকা
মানুষের সম্মান.. আল্লাহ্'ই রক্ষা করে থাকেন।
Comments
Post a Comment