Skip to main content
রুমে বসে বসে মোবাইলে গেমস খেলছি। তখনি মা রুমে আসলো।
-- কিরে পড়াশুনা বাদ দিয়ে সারাদিন মোবাইল নিয়ে বসে
থাকলেই পেট ভড়বে।
-- মা মাত্র তো মোবাইলটা হাতে নিলাম।
-- হুমম এইটাই চিবা বসে বসে তাহলেই আর খেতে হবে না।
-- মা এমন টা নয় যে সারাদিন বই পড়লে আমার খিদে লাগবে
না। আমি যখনই মোবাইলটা হাতে নেই তখনই তুমি দেখো।
-- হইছে হইছেমুখে মুখে তর্ক করতে হবে না। কপাল গুণে
পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাইছোস। আর তো ১টা বছর বাকি
আছে। এখন আপাতত মন দিয়ে পড়।
-- প্রতিদিন এই বই পড়, বই পড় বলে ভাঙ্গা রেডিওর হম বকবক
করো না তো বিরক্ত লাগে।
-- হুমম আমি তো যাই বলি তাই তোর কাছে বকবক মনে হয়।
-- ও একটু চুপ করবে।
-- হইছে এখন ছাদে গিয়ে গাছ গুলোতে জল দিয়ে আয়।
--একটু পরে যাই।
-- না এখনই যা। তোকে খাওয়াইয়া তো আমার কোন কাজে
আসে না, একটা গাছ বড় করলেও আমার কাজে আসবো।
-- যাচ্ছি।
একটা বিরক্তিকর মুড নিয়ে মোবাইলটা পকেটে নিয়ে বেড়িয়ে
পড়লাম ছাদের উদ্দেশ্যে। ছাদে এসে জল দিতে লাগলাম। তখনই
আমার মোবাইলটা বেঁজে উঠলো। এই অসময়ে ফোনটা দিলো
কে? মোবাইলে তাকিয়ে দেখি নিত্তিয়া মানে আমার
গার্লফ্রেন্ডই বলা যায়। আসলে আমরা একসাথেই ছোট থেকেই
বড় হয়েছি তবে নিত্তিয়া আমার ১ দিনের বড়। এই একদিনের বড়
বলে আমাকে যে কত্তো কষ্ট সয্য করতে হয়। নিত্তিয়ার মা আর
আমার মা নাকি বান্ধবী। শুনেছিলাম যদি ছেলে বড় হয় মানে
আমি যদি বড় হই তাহলে আমাদের নাকি বিয়ে দিবে কিন্তু
কাহিনী হলো পুরো উল্টো। নিত্তিয়া আমার একদিনের বড় হয়ে
গেল। তাই আমি নিত্তিয়াকে মাঝে মাঝে আপু বলতে চাইতাম।
কিন্তু নিত্তিয়া হেব্বি রেগে যেতো আর আমার সাথে কথা
বলতো না। তারপর কোন গিফট দিয়েই ওর রাগ কমাতে হতো।
একবার ও আমায় জোর করে আমাকে মেরে আমাকে দিয়ে
প্রপোজ করায়। আমি নিজেই প্রপোজ করতাম কিন্তু ও আমার বড়
বলে সাহস হয় নি। কিন্তু ও যেহেতু আমাকে জোর করেই প্রপোজ
করিয়েছে তাহলে তো আর কিছু করার নেই। তবে এখন নিত্তিয়া
আমায় একটু বেশিই টর্চার করে। যাই হোক, আগে ফোনটা ধরি
নয়ত বলবে আমি কোন মেয়ের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত....
-- হুম নিত্তিয়া এই বিকালে ফোন।
-- কেন? তোমায় ফোন দেওয়ার জন্য বুঝি তোমার থেকে সময়
খুঁজে নিতে হবে?
-- আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে যে আমি তোমায় এই কথা
বলবো।
-- হইছে এবার শুনো, গতকাল আমার ভাই তোমাদের এলাকায়
ক্রিকেট খেলতে গেছিল কিন্তু তুমি নাকি ওরে দলে নাও নি।
-- এই সাড়ছে রে। মাঠের কথাও বড় বোনকে বলতে হয় নাকি।
( আস্তে আস্তে বললাম)
-- ওই কি বলছো বুঝিয়ে বলো?
-- আরে তোমার ভাই তো এখনো ছোট। যদি বল লেগে ব্যাথা
পায় তাহলে বলবে দুলাভাইয়ের এলাকায় খেলতে গেলাম আর
ওনি আমায় মারছে।
-- ও তাই বুঝি। আমি জানতাম আমার ভাই নাকি তোমার বলে
৪টা ছক্কা মারছিল।
-- আরে ওইটা এমনি বল করছিলাম।
-- ও তাই না।
-- হুমম
-- চুপ, তোমায় আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। কাল থেকে আমার
ভাইকে যদি ওপেনিং ব্যাটিং না করাও তাহলে তোমাকে...
-- আর বলতে হবে না। তোমার কথাই রাখবো।
-- এই তো ভাল ছেলের মত কথা।
-- হুমম
নিত্তিয়ার সাথে কথা বলা শেষ না হতেই পিছন থেকে মা
ডাকতে লাগলো। আর এসে দেখলো আমি জল না দিয়ে
মোবাইলে কথা বলছি।
-- ওরে নবাব আবার তুই মোবাইল নিয়ে পরলি। এই মোবাইলটার
আয়ু তো তুই শেষ করে ফেলছিস। এখন আবার কার সাথে কথা
বলছিস।
-- তোমার হবু বউমার সাথে।
-- মানে?
-- না মানে তোমার স্বামীর ছেলের শালার বোনের লগে কথা
বলছি। এই জলের পাত্রটা ধরো আমি গেলাম।
-- কি??
মা কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে হয়ত ভাবলো আমি কি বলছি? এখন আমার
উপর রাগারাগি শুরু করে দিছে। তাই আমি আর বাসায় না থেকে
রেডি হয়ে খেলার মাঠের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লাম।
.
এলাকার মাঠের পাশে চায়ের দোকানে বসে বন্ধুদের সাথে
আড্ডা দিচ্ছি। হঠাৎ তুহিন বলল...
-- রাজ আজকের খবরের কাগজ দেখছোস?
-- না দেখি নি তবে তোর চেহারাটা তো দেখলাম। এবার খবর
গুলো বলতে থাক।
-- আমারে দেখে কি যারা টিভির খবর বলে তাদের মত লাগে।
-- আসলে তা নয়। প্রত্যেকটা বন্ধুমহলে এমন একটা বন্ধু থাকে
যে সব খবর রাখে।আর আমাদের বন্ধুর মাঝে এই কাজটা তুই
করিস।
-- পাম দিচ্ছিস।
-- কেন পাম কি কম দিলাম যে বুঝে গেলি পাম দিচ্ছি?
-- হারামী।
-- আচ্ছা এবার বল তুহিন কি খবর বলতে চাইছিস?
-- এই যে দেখ কর্ণফুলীতে এক পরিবারের চারজনকে ধর্ষন।
তিনজন জ্যা ছিল আর একটা ননদ ছিল। আর তিনজন জ্যা এর
মাঝে একজন ৬ মাসের অন্তসত্ত্বা ছিল।
-- কি বলিস? দেখি তো।
তুহিনের থেকে খবরের কাগজটা নিয়ে খবরটা পড়তে লাগলাম।
আসলেই তো এমন হয়েছে। ঘরে ডাকাতি করতে এসে কিছু পায়
নি বলে এই কাজ করছে। ছিঃ ওরা মানুষ নাকি পশু। ওদের কি
পরিবার নেই নাকি ওর জারজ । তখন তুহিন বলল...
-- দোস্ত এটা তো কিছু না, এমন হাজারও ধর্ষন হচ্ছে।
--ঠিকই বলছিস দোস্ত। আসলে কিছু ছেলেরা বলে পর্দা করে
না বলে মেয়েরা ধর্ষন হয় কিন্তু এখন কি বলবে সেইসব
ছেলেরা।
-- রাজ ধর্ষণের মূল কারন হলো মনুষ্যত্ব বিকৃত হওয়া।
-- ঠিকই বলছি।
আমাদের আড্ডার জায়গাটা কেমন যেন থমকে গেল। প্রতিটা
পরিবারের চিন্তার শেষ নেই। কারন ধর্ষণ ব্যাপারটা এখন
প্রতিযোগিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কে কার থেকে বেশি ধর্ষণ
করতে পারে সেই প্রতিযোগিতা। এইসবের শেষ যে কোথায় হবে
কেউ জানে না।
আড্ডা দিতে আর ভাল লাগছে না তাই সবাই চলে আসলাম। আর
সবাই যে যার মত চলে গেল।
.
রাতে রুমে শুয়ে শুয়ে ফেসবুক চালাচ্ছি তখনই নিত্তিয়ার ফোন
আসলো। নিত্তিয়া হলো আমার হাসির কারন। ওর সাথে কথা
বললে আমার মুখে হাসি ফুটবেই। তাই,নিত্তিয়ার ফোনটা
রিসিভ করলাম।
-- হুমম নিত্তিয়া বলো।
-- কাল সকালে পার্কে দেখা করতে পারবে।
-- কেন?
-- ওরে বাব্বা, তোমার সাথে মিট করতে বুঝি আমার কোন
কারন থাকতে হবে।
-- আরে না।
-- আচ্ছা রাজ শুনো, কাল আমার জন্য শিউলি ফুল আর একটা
চিপস নিয়ে এসো হুমম।
-- ওকে।
-- আচ্ছা আমি তোমার জন্য কি আনতাম বলো?
-- যা তোমার মন চায়।
-- ও আচ্ছা রাজ তোমার কি মন খারাপ?
-- না তো।
-- হুহহ আমি তোমাকে যথেষ্ট বুঝি ওকে। এবার বলো তোমার
হয়েছেটা কি?
-- আসলে, ভাবছি মানুষ কতটা অমানুষ হতে পারে যে মেয়েদের
জোর করে ধর্ষন করে।
-- হুমম।
-- আসলে নিত্তিয়া এখন যেন পবিত্র ভালবাসাটাই হারিয়ে
গেছে। কেউ ভালবাসছে টাকার জন্য আর কেউ ভালবাসছে দেহ
ভোগের জন্য। আসলে সবই স্বার্থের পাগল।
-- হুমম ঠিক আচ্ছা যাই হোক, এত্তো কিছু ভেবো না তো।
-- ভাববো না বললেই কি এইসব বন্ধ হবে।
-- ওকে রাজ সাহেব এখন এইসব বাদ দিয়ে আমার সাথে মিষ্টি
করে কথা বলো তো।
-- কি বলবো?
-- বলো কাল আমি তোমার জন্য কি নিয়ে আসবো?
-- বেশি কিছু লাগবে না বরং ৫ কেজি পেয়াজ কিনে আনলেই
চলবে।
-- ওরে বাবা পেয়াজ। আমি তো অলরেডি নিরামিষ খাওয়া শুরু
করে দিছি।
-- হা হা নিত্তিয়া তুমিও না।
-- এই তো রাজ হাসছে।
-- তুমি তো আমার হাসি,খুশি আর রাক্ষসী। তুমি না হাসালে
কে আমায় হাসাবে।
-- কি আমি রাক্ষসী?
-- না তো তুমি তো আমার পরী।
-- ওই একটু আগেই তে বললে রাক্ষসী।
-- ও বলছিলাম বুঝি।তাহলে হয়ত ঠিকই বলছিলাম।
-- কী বললে?( কান্না কান্না ভাব)
-- না আমি বললাম তুমি একটা মিষ্টি মেয়ে।
-- হুহহ কাল পার্কে এসো তোমাকে রাক্ষসীর মতই কামড় দিবো।
-- ওই না।
-- একদম চুপ। এখন লক্ষী ছেলের মত ঘুমিয়ে পড়ো। আর একটা
কথা, ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখবে এটা কোন ব্যাপার না তবে আমাকে
ছাড়া যদি অন্য কোন মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখো তাহলে
তোমার স্বপ্নে এসে আমি তোমায় পিটিয়ে যাবো।
-- ওকে আমার রাক্ষসী। না মানে আমার পরী।
-- হুমম এবার ঘুমাও বায়।
-- বায়।
আজব চরিত্রের মেয়ে এই নিত্তিয়া। ও আমার এত্তো কেয়ার
করে যে মাঝে মাঝে নিজেকে ওর মাঝেই হারিয়ে ফেলি।
.
সকালে পার্কে দাঁড়িয়ে আছি মহারাণীর জন্য। নিত্তিয়া
আমায় গত ৫ বছর আগেই বলেছিল আমি যেন সব সময় ওর জন্য
অপেক্ষা করি। আসলে ভালবাসাটা বিশ্বাস আর অপেক্ষার
মধ্যেই প্রকাশ পায়। আর কিছু প্রেম আছে যা ফোনে শুরু হয় আর
ফোনেই শেষ হয়। তাই সব ভালবাসা এক না।
১০ মিনিটের বেশি অপেক্ষা করার আগেই মহারাণীর আগমন
ঘটলো। এসেই আমায় বলতে লাগলো..
-- ওই দেখো তো আমায় নীল ড্রেসে কেমন লাগছে আর চোখেও
গাঢ় কাজল দিছি দেখো।
-- হুমম।
-- হুমম মানে কি?? খুব খারাপ লাগছে।
-- ভালই তো।
নিত্তিয়া আর কোন কথা না বলে ঘাসের উপর বসে পড়লো।
বুঝছি মেয়েটা খুবই রাগ করেছে। এবার আর কি কোমড় বেঁধে ওর
রাগ কমাতে লাগতে হবে।যদি বলতাম একটু বেশি সুন্দর লাগছে
তাহলে আমার দোষটা কি হতো? নিত্তিয়া একটু শ্যামলা তবু
দেখতে খুব কিউট। আর আজ তো ভালই লাগছে। আমি নিত্তিয়ার
আচরণ,ব্যবহার আর ওর মনটা দেখে ভালবাসছি। আমিও
নিত্তিয়ার পাশে বসলাম...
-- মেডামের খুব রাগ হইছে তাই না।
-- না।
-- হুমম বুঝলাম। রাগ না হলে আর কি করবে বলো? রাগ করলে না
হয় তোমার রাগটা কমানোর চেষ্টা করতাম।
-- হুমম
আমি জানি এই কথা শুনার পর নিত্তিয়ার রাগটা আরো বেড়েই
যাবে। দেখি মেডাম বেশি রাগালে কি করে? কিছুক্ষন
নিরবতার পর নিত্তিয়ার নাক টানার শব্দ আসছে। মানে কান্না
করা শুরু হয়ে গেছে। আমি নিত্তিয়ার দিকে তাকাতেই দেখি
নিত্তিয়ার গাল দুটা কাজলের কারনে কাল হয়ে গেছে। একটা
মেয়ে যে এক মুহূর্তে কান্না করে গাল ভাসাতে পারে তা
আমার জানা ছিল না। একটা ছেলেকে দূর্বল করার জন্য একটা
মেয়ের দুই ফোঁটা চোখের জলই যথেষ্ট। আমি পকেট থেকে রুমাল
বের করে নিত্তিয়ার গাল গুলো মুছে দিতে লাগলাম।
-- বাহ্ তুমি এত্তো কান্না করতে পারো জানতাম না তো।
-- ( চুপ করে আছে)
-- আচ্ছা বাদ দাও, এই দেখো তোমার কান ধরলাম আর তোমায়
কাঁদাবো না।
ওর কান ধরতে যেতেই ও আমার হাতটা টান দিয়ে জোরে দিলো
এক কামড়। আর আমি পাব্লিক প্লেসে চিৎকার দিবো না
ভেবেও আর না দিয়ে পারলাম না। ও যখন আমার হাত ছাড়লো
তখন আমি দেখি দাঁতের কয়টা দাগ বসছে। ও বসা থেকে উঠে
চলে যাবে তখনই আমি ওর হাতটা ধরলাম।
-- ছাড়ো আমি বাসায় যাবো।
-- একটু বসো দরকার আছে।
-- না বাসায় অনেক কাজ আছে।
-- প্লিজ একটু বসো। তারপর না হয় চলে যেও।
নিত্তিয়া চুপচাপ বসে পড়লো। আমি ওর বাম হাতটা শক্ত করে
আমার হাতে মুষ্টিবদ্ধ করলাম।
-- খুব রাগ হইছে আমার উপর তাই না।
-- জানি না।
-- জানো নিত্তিয়া আমি এখনো তোমায় ঠিক ভাবে তাকিয়ে
দেখি নি কারন তোমায় আমি যতবার দেখি ততবারই তোমার
প্রেমে নিজেকে হারিয়ে ফেলি। জানি না তুমি বিশ্বাস করবে
কি না তবে এটা সত্য যে তোমায় ভালবাসার পর থেকে কোন
মেয়ের দিকে দরকারের বেশি তাকাই না। কারন, আমি
নিজেকেই তোমার মাঝে হারিয়ে ফেলেছি। তোমায় নীল
ড্রেসে আর গাঢ় কাজলে কেমন লাগবে সেটা আমি কল্পনা
করে নিয়েছি। আর তোমায় সব সময়ই একটু বেশিই ভাল লাগে।
--( নিত্তিয়া চুপ)
-- এখন যদি মন চায় তাহলে বাসায় চলে যেতে পারো।
-- কেন? আমি চলে গেলে বুঝি অন্য কোন মেয়ে আসবে হুমম।
-- আসতেও পারে।
-- আরেকটা বার বলো কথাটা, তোমায় খুন করে ফেলবো।
আমি কিছু বলতে যাবো তখনই নিত্তিয়ার ফোনটা বেঁজে
উঠলো। ও ফোনটা রিসিভ করে কার সাথে যেন কথা বলল। কিন্তু
ফোনের ওপাশে হয়ত এমন কোন কথা শুনছে যার কারনে ও
স্তম্ভিত হয়ে গেছে।
-- নিত্তিয়া কি হলো? কে ফোন দিছিল? বলো।
-- ( ও চুপ)
-- কি হইছে বলবে তো?
-- দিয়া ফোন দিছিল। আমাদের বান্ধবী নিহাকে নাকি
সকালে কোচিং যাবার পথে কিছু ছেলেরা কিডন্যাপ করে আর
ধর্ষণ করে খুন করে নিহার লাশটা নিহার বাসার সামনে ফেলে
যায়।
-- এখন কি করবে?
-- আমাদের সব বান্ধবীরা নিহার বাসার সামনে যাচ্ছে। চলো
আমরাও যাই।
-- হুমম চলো।
আমরা তারাতারি পা চালাতে লাগলাম। পার্ক থেকে বার
হয়েই একটা রিকশা নিলাম। আমি কি করবো বুঝতেছি না তাই
তুহিনকে ফোন দিলাম।
-- হুমম রাজ বল।
-- দোস্ত তুই এখন কোথায়?
-- ক্লাস থেকে বার হইছে। তুই ক্লাসে আসিস নি কেন?
-- দোস্ত নিত্তিয়ার এক ফ্রেন্ড নিহাকে কারা যেন ধর্ষণ করে
খুন করে নিহার বাসার বাইরে লাশ ফেলে দিয়ে গেছে।
-- কি বলিস?
-- হুমম আমি নিত্তিয়াকে নিয়ে নিহার বাসায় যাচ্ছি। তুই একটু
আসবি। আমি বুঝতে পারতাছি না কি করবো আর নিত্তিয়াও
অনেক কান্না করছে।
-- ওকে আমি আসছি। তুই নিহার বাসার ঠিকানা আমায়
ম্যাসেজ করে পাঠা।
-- ওকে।
ফোন রেখে আমি নিহার বাসার ঠিকানা তুহিনকে ম্যাসেজ
করে পাঠিয়ে দিলাম।
.
আমি আর তুহিন নিহার বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। আর
নিত্তিয়া তার বান্ধবীদের নিয়ে নিহাকে দেখতে গেছে। আমি
আর তুহিনও দেখে আসছি তবে খুব খারাপ লাগছে যে মেয়েটার
গলা কেটে হত্যা করা হইছে। পুরুষ কি করে এমন কাপুরুষ হতে
পারে? প্রতিটা মেয়েকে নিজের মা বা বোন কল্পনা করলে কি
সমস্যা? হয়ত অনেকে বলবে এখনো নিরক্ষরতা বেশি দেখে
দেশে এমন হচ্ছে। হায়রে, কিছু হয়ে গেলে মানুষ তার কত কত যে
কারন বার করে। এই ধর্ষণ বন্ধের কোন না কোন উপায় বার
করতেই হবে নয়ত এমন কাজ দিন দিন বেড়েই চলবে।
নিত্তিয়া কাঁদতে কাঁদতে বাইরে আসলো। তারপর ও বাসায়
যাওয়ার জন্য বলল...
-- রাজ চলো বাসায় চলে যাই। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে এখানে।
-- হুমম যাবো তবে বাসায় নয় বরং ভার্সিটিতে।
-- কেন?
-- চলো।
তারপর একটা অটোতে উঠে আমি,তুহিন আর নিত্তিয়া রওনা
দিলাম।
ভার্সিটিতে এসেই সরাসরি অফিসে চলে গেলাম। তারপর
প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে কথা বলতে লাগলাম। যেহেতু
আমরা ভার্সিটির সিনিয়র তাই আমাদের কথা ওনার মনযোগ
সহকারেই শুনে।
-- স্যার আজ আপনার একটা সাহায্য আমার লাগবো।
-- কি হয়েছে রাজ?
-- স্যার দিন দিন ধর্ষণের পরিমান বেড়েই চলেছে। এই ব্যাপারে
আপনার একটু সাহায্য চাই।
-- আমি কিভাবে তোমায় সাহায্য করতে পারি।
-- আপনি কিছু না পরলেও কিছুক্ষনের জন্য ভার্সিটির
ছাত্রছাত্রীদের একসাথে তো করতে পারবেন।
-- তা পারবো। কিন্তু তুমি তাদের দিয়ে কি করবে?
-- ধর্ষণ বন্ধ করতে সব থেকে বড় অবদান ছাত্ররাই রাখতে পারে।
তাই আপনি দয়া করে মাইকের সাহায্যে সকল ছাত্রছাত্রীদের
মাঠে আসতে বলেন।
-- ওকে।
তারপর স্যার আমাদের দিকে তাকিয়ে এই কাজটা করলো। আর
স্যারের কথা মত ৫ মিনিটে সম্পূর্ণ মাঠ ছাত্রছাত্রীদের ভড়ে
গেল।
.
আমি একট হাতে হ্যান্ড মাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর অনেক
স্যার আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। আর প্রিন্সিপাল স্যার
আমার সাথেই। স্যারকে আলাদা ভাবে নিহার ব্যাপারটা বলায়
স্যার এই কাজটা আমায় করতে সাহায্য করছে।আমি ছাত্রদের
উদ্দেশ্যে বলতে লাগলাম।
-- আপনার সবাই একসাথে করার কারনটা আমি বলবো। তার
আগে সবাই এখানে আসার জন্য ধন্যবাদ। জানি আপনারা এখন
ক্লাস শেষ করে বাসায় যাওয়ার কথা কিন্তু আমার কারনে
এখানে দাঁড় করিয়ে রাখছি তার জন্য আমি দুঃখিত। যে কারনে
আপনাদের সাহায্য তা হলো ধর্ষণ বন্ধ করতে। হয়ত অনেকেই
চমকে যাবেন কিন্তু আসলে ছাত্র শক্তিই পারে এই ধর্ষণ বন্ধ
করতে। আসলে ধর্ষণ হওয়ার মূল কারন হলো মনুষ্যত্ব বিকৃত হয়ে
যাওয়া। যখন আপনারা মনুষ্যত্ব হারাবেন তখন অমানুষ হয়ে
যাবেন আর এই অনৈতিক কাজ করবেন। প্রতিদিন আমাদের
দেশে ২০ থেকে ৩০ টা ধর্ষণ কেস জমা হচ্ছে কিন্তু এর
প্রতিকার নেই। এমন ঘটনাও ঘটেছে যে মেয়ের ধর্ষনের কেস
করতে মেয়ের বাবা যখন পুলিশের কাছে যায় তখন পুলিশই
মেয়ের বাবাকে জেলে আটকে রাখে। আর সব থেকে বড়
ব্যাপার হলো আমাদের দেশে অপরিচিত মানুষের চেয়ে চেনা
মানুষের দ্বারাই মেয়েরা ধর্ষিত হচ্ছে কিন্তু কোন বিচার নেই।
আর আমরা অনেকেই বলে থাকি মেয়েরা অনৈতিক কাপড় পড়ে
বলে ছেলেদের এক প্রকার নেশার তৈরি হয়। হুমম এটা ঠিক তবে
মাত্র ২০% ধর্ষণের কারন হয় অনৈতিক পোশাকের জন্য। আচ্ছা
যাই হোক, যদি পোশাকের কারনেই জন্যই মেয়েরা ধর্ষণের
কারন হয় তাহলে পূজা নামে ৭ বছরের মেয়েকে ধর্ষনের কারন
কি? হাজার হাজার গৃহবধূ ধর্ষণ হচ্ছে এর কারন কি? আচ্ছা
আমরা সকল ছাত্রছাত্রীরা তো স্মার্টফোন ব্যবহার করি তাই
না। আপনারা একটা বার Google এ ধর্ষণ লেখে সার্চ দিয়ে
দেখেন। চোখের জল ধরে রাখতে পারবেন না। প্রতিবন্ধী শিশু
ধর্ষণ, নিজের স্ত্রীকে গন ধর্ষণ আর আরো হাজার হাজার এমন
কর্মকান্ড দেখবেন। একটা বার কি এইসবের মুখমুখী হয়েছেন
কেউ। যাই হোক, ধর্ষণ রোধে আমাদের দেশের আইন কি জানেন
তো? আমি কিন্তু জানি না। আর জানলেই বা কি, এই আইন তো
আর কেউ মানে না। কিছু কিছু দেশে ধর্ষণের আইন এতটা কঠিন
যে কেউ ধর্ষণ বুঝে শুনে করবে না। রাশিয়াতে মৃত্যুদন্ড দেওয়া
হয়, ইরানে ধর্ষককে জনসম্মুখে ফাঁসি দেওয়া হয়, গ্রীসে তো
পুড়িয়ে মারা হয় আর ভারতে ১৫ বছরের কারাদন্ড। আর আমাদের
দেশের আইন তো আর বললাম না। সম্প্রতি গত বছর আর এই বছর
যদি ধর্ষণের পরিসংখ্যান বের করা হয় তাহলে দেখা যাবে
প্রতিনিয়ত ধর্ষণ বেড়িয়েই চলেছে। আজ আমাদের ভার্সিটির
নিহা নামের একজন ছাত্রী ধর্ষণ হয়েছে এবং তাকে গলা
কেটে মেরে ফেলা হয়েছে। ওর কি কোন দোষ ছিল। হয়ত বা
ছিল আবার নাও হতে পারে। আবার কিছু ছেলে আছে মেয়েরা
প্রেমে রাজি না হলে মেয়েকে তুলে নেয়। হায়রে ভালবাসা,
একে কি ভালবাসা বলে। তাই চলুন,আমরা ছাত্ররা মিলে ধর্ষণ
প্রতিরোধ নয় বরং প্রতিকার করি । যাকে ধর্ষক হিসেবে
চিহ্নিত করা যাবে আর প্রমান পাওয়া যাবে তাকেই আইনি
শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর যদি আইন এর শাস্তি না দেয়
তাহলে ছাত্রদের পাওয়ার সম্পর্কে কারো আইডিয়া নেই।
আমার কথা হয়ত বুঝেছেন। আর সব থেকে বড় কথা হলো, আমরা
প্রতিটা মেয়েকে নিজের মা বা বোনের রূপে দেখার চেষ্টা
করি আর ভালবাসার মানুষকে সম্মান করতে শিখি। কারো
সাথে প্রেমে না জড়িয়ে একজনকে মন দিয়ে ভালবাসি। আর
আপনারা নিজেরাই হয়ে উঠুন এক একটা আগুন, যেখানে
ধর্ষকদের পুড়িয়ে ফেলা হবে। আর সবাইকে ধর্ষণকে এড়িয়ে
চলতে শিখান। এখন আমার কথা গুলো যদি কারো খারাপ লাগে
তাহলে আমি দুঃখিত। আসলে নিহার মৃত দেহ দেখার পর শরীরে
একটা অনুভূতি আসছে। আমি তো একা পারবো না এইসব বন্ধ
করতে। আপনারা আমার পাশে থাকলে হয়ত পারবো। পাশে
থাকবেন তো আমার।
-- হুমম ভাই আমরা আছি। ( সবাই চিৎকার দিয়ে বলল)
চোখে জলই চলে আসলো সবার উৎসাহ দেখে। তারপর সবাইকে
বিদায় জানিয়ে চলে আসলাম নিত্তিয়ার হাতটা ধরে। জানি
না আমার ডাকে কতজন নিজেকে বদলাবে আর কোন মেয়ের
জীবন নষ্ট করবে না বরং ভালবেসে মেয়েটার হাত ধরবে।

Comments

Popular posts from this blog

ভালবাসার সঙ্গা:-

ভালোবাসার সংজ্ঞা দিয়েছেন বিভিন্ন দার্শনিক বিভিন্ন ভাবে । ব্যক্তি ভেদে এই সংজ্ঞা বদলে যায় , যেমন বিখ্যাত গণিতবিদ পীথাগোরাস কে আমরা সবাই কম-বেশি চিনি। একবার কোন এক “ ভালোবাসা দিবস” এ এক লোক পীথাগোরাস কে জিজ্ঞেশ করেছিল, আপনার কাছে ভালবাসা’র সংজ্ঞা কী হতে পারে? পীথাগোরাস কোনো কথা না বলে খাতা-কলম নিয়ে বসে পরলো। তারপর কিছুক্ষন পর বলল, আমার কাছে ভালবাসা হচ্ছে ২২০ এবং ২৮৪ এর উৎপাদক ।তখন লোকটি বলল , কীভাবে? পীথাগোরাস বলল , ২২০ এর উৎপাদক হলো ১,২,৪,৫,১০,১১,২০,২২,৪৪,৫৫,১১০ এবং ২৮৪ এর উৎপাদক হলো ১,২,৪,৭১,১৪২ এখন আপনি যদি ২২০ এর উৎপাদক গুলোকে যোগ করেন তাহলে যোগফল হবে ২৮৪ (১+২+৪+৫+১০+১১+২০+২২+৪৪+৫৫+১১০=২৮৪) এবং ২৮৪ এর উৎপাদক গুলোকে যোগ করেন তাহলে যোগফল হবে ২২০ (১+২+৪+৭১+১৪২=২২০) কী! মজার না? আবার দেখুন আমাদের দেশের কবি রফিক আজাদের একটা কবিতা আছে, "ভালোবাসার সংজ্ঞা" ভালোবাসা মানে দুজনের পাগলামি, পরস্পরকে হৃদয়ের কাছে টানা; ভালোবাসা মানে জীবনের ঝুঁকি নেয়া, বিরহ-বালুতে খালিপায়ে হাঁটাহাঁটি; ভালোবাসা মানে একে অপরের প্রতি খুব করে ঝুঁকে থাকা; ভালোবাসা মানে ব্যাপক বৃষ্টি, বৃষ্

আমি নিজের চোখকে বিস্বাস করাতে পারছিলামনা।

আমি নিজের চোখকে বিস্বাস করাতে পারছিলামনা। - রাইসাঃ কি তুমার বিস্বাস হচ্ছেনা,আমি তুমার সামনে?? - আমিঃ তুমাকে কি আমি স্পর্শ করে দেখতে পারি? - রাইসাঃ আমি কি তুমাকে নিষেদ করেছি! - আমি আমার হাতটা রাইসার হাতের উপরে রাখলাম,আমার ভিতরে অজানা একটা ভাল লাগা কাজ করলো,বুকের ভিতরটা মোচর দিয়ে উঠলো! - এরি নাম হয়তো ভালবাসা! - আমি শুধু মুগ্ধ হয়ে রাইসাকে দেখছি।। - কখন যে সময় পেরিয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না।।।হঠাৎ রাইসার ডাকে আমার হুশ্ ফিরলো! - রাইসাঃএখন আমাকে যেতে হবে শাকিল। - আমিঃ কেন?আরেকটু থাকোনা! - রাইসাঃ না একটু পরে আযান হবে,আমি আর থাকতে পারবনা, দিনের আলো আমি একদম সহ্য করতে পারিনা।আমি যাচ্ছি ভাল থেকো। রাইসা চলে গেলো। - ঘরটা আগের মতো আবার অন্ধকার হয়ে গেলো।শুধু একটা মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছি! - - তার পর বেশ কিছুদিন কেঁটে গেলো,রাইসা আমাকে কল করছে না,দেখা করতেও আসছেনা।। - ভাবলাম ও হয়তো আমাকে ভুলে গেছে! মনের অজান্তেই কখন রাইসাকে আমি ভালবেসে ফেলেছি,জানিনা। - খুব কষ্ট হচ্ছিলো! রাইসাকে ছাড়া আর কোন কিছু ভাবতে পারছিনা আমি। হোক না সে অন্য কোন জাতি!আমি তু তাকে ভালবাসি আর ভালবাসা
ছেলেরা মাসে ৭০০০ টাকা বেতনে চাকরী করে!বাবার জন্য ১০০০,!মা'র জন্য ১০০০,!বউয়ের জন্য ১০০০ টাকা!ফেমিলি চালানোর ২০০০ বিকাশ করেও! দিব্যি ২০০০ টাকায় মাস চালিয়ে নিতেজানে। মাসে ৭০০০ টাকা মাইনের ছেলেটা বেতন পেয়ে! বউয়ের কাছে ফোনে বলতে জানে " ওগো তোমার জন্য কিপাঠাবো? " সামান্য বেতন পাওয়া যে ছেলেটা নিজের পুরনোজুতো বদলাবে বলে ঠিক করেছে , সেই ছেলেটাইমার্কেটে গিয়ে বউ আর বাবুর জন্য জুতো কিনে নিজের ছেঁড়াজুতো সেলাই করেমাসের পর মাস পড়তেজানে। উপোস পেটে কাজে গিয়েও মাকে বলতে জানে'আমি মাছ দিয়ে ভাত খেয়েছি তোমরা খেয়েছোতো', ১০৩ ডিগ্রী জ্বর নিয়ে কাজে গিয়েও বাবাকে বলে 'আমি অনেক ভাল আছি তোমরা ভাল আছোতো? নিজের পকেট ফাঁকা জেনেও বউকে বলে ' একটু ধৈর্য্য ধরো সামনের মাসে তোমার জন্য একজোড়া বালা কিনেদিব।