Skip to main content

ভাড়াটে বউ


রাইসার দিকে তাকিয়ে ধুম করে বসে পড়লো, আর বারবার
বুকটাকে চেপে ধরলো, পাগলের ন্যায় ক্রমাগত বলতে
লাগলো --- না, এটা হতে পারেনা, এ চলে যেতে পারেনা,
একে বাচতে হবে, বাচতে হবে। রিয়ান চোখের জলগুলো
মুছে বসে না থেকে, দৌড়ে- রাইসার কাছে গিয়ে ওকে
কোলে নিলো , কাপা- কাপা কন্ঠে বারবার বলতে
লাগলো--- এই মেয়ে চোখ খোলো, এই দেখ আমি তোমাকে
কোলে নিয়েছি আজকে আর চাউলের বস্তা বলে ফেলে
দিবোনা। প্লিজ চোখ খোলো, আরে আমাকে তোমার ঠিক
করতে হবেনা? তোমার যে এখনো অনেক কাজ আছে এভাবে
চলে যেয়ো না। কিন্তু রাইসার কোনো সাড়া না পেয়ে
ধীরে - ধীরে ছেলেটি নিশ্চুপ হয়ে গেলো। বুঝে ফেললো
--- মেয়েটি ওর কথাটা রাখার জন্য দূরে চলে গেলো।
চারপাশের আবহাওয়া ধীরে- ধীরে আর ও অন্ধকারের
আড়ালে লুকিয়ে যাচ্ছে, আকাশ বারবার আর্তনাদ করছে,
বৃষ্টির স্পর্শের জন্য, প্রকৃতির মাঝে গম্ভীরতা প্রকাশ
পাচ্ছে, এমতাবস্থায় রিয়ান নিজের আবেগকে কন্ট্রোল
করে, চারপাশে তাকিয়ে বলতে লাগলো -- না এভাবে আর
দাড়িয়ে থাকলে হবেনা, আমি ওকে নিয়ে হসপিটালে
যাবো, ওকে বাচতেই হবে। এই বলে, রিয়ান তাড়াতাড়ি
রাইসাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে, বারবার ড্রাইভারকে
উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো--- এই তুমি তাড়াতাড়ি চালাও,
প্লিজ। ওকে, ওকে আমি কোথা ও যেতে দিবোনা। হে ইউ
আমার সাথে জগড়া করবেনা, লিসেন আমার ভুল হয়েছে
প্লিজ ফিরে এসো। ড্রাইভার ও রাইসার এই অবস্থা দেখে
খুব দ্রুত গাড়ি চালাতে লাগলো, কিন্তু রিয়ানের মনে হচ্ছে
পথটা যেনো আজ শেষ হচ্ছে না, আসলে আমাদের লাইফে
আমরা এমন কিছু সিশুয়েশন পড়ি যখন আমাদের অপেক্ষারর
প্রহরটা অধীক হয় কিন্তু অপেক্ষা করার ইচ্ছাটা সল্প থাকে
তাই তখন আমাদের মনে হয় সময়টা খুব ধীরগতির। । যাইহোক,
অবশেষে রিয়ানের অপেক্ষার প্রহরটা শেষ হয়, রাইসাকে
নিয়ে হসপিটালে আসতেই দূর থেকে সাঈফ রিয়ানের
কোলে রাইসাকে দেখা মাএই দৌড়ে আসলো, তারপর
চিৎকার দিয়ে রিয়ানকে পাগলের মতো জিজ্ঞাসা করতে
লাগলো--- ওর কী, কী হয়েছে, ওর শরীরে এতো রক্ত কেন?
নার্স, নার্স। সাঈফের এরুপ চিৎকারে রাইসাকে নার্সরা
এসে কেবিনে নিয়ে গেলো, আর রিয়ান অবাক দৃষ্টিতে
হাতের মধ্যে লেগে থাকা রাইসার রক্তগুলোর দিকে
তাকিয়ে চোখের জলগুলো টপটপ করে ছেড়ে দিলো,
নিজের চোখের জলগুলো যখন গাল বেয়ে নিচে পড়তে
লাগলো তখন ও বিস্মিত কন্ঠে নিজেকে বলতে লাগলো, ---
আমি কাঁদছি?, আমি রিয়ান হক কাঁদছি। এই মেয়ে কই তুমি,
তুমি সফল হয়েছো,দেখ এই রিয়ান হককে তার জমাটবদ্ধ কষ্ট
থেকে এক পশলা বৃষ্টির স্পর্শে আজ মুক্ত পেয়েছে। কই তুমি,
কই। প্লিজ কাম ব্যাক। রিয়ানের পাগলের মতো এরুপ আচরন
আর ওর চোখ জল দেখে সাঈফ অনেক বেশি অবাক হয়,
রিয়ানের কাছে এসে ওর মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠলো----
রিয়ান ওর কী হয়েছে, ওর কী হয়েছে, রাইসা, কেন কথা
বলছেনা,। রিয়ান সাঈফের প্রশ্নগুলোর কোনো উওর না
দিয়ে নিরবতার আড়ালে বসে শুধু অঝোর দ্বারা চোখের জল
ফেলাতে লাগলো। সাঈফ রিয়ানের এই অবস্থা দেখে ওর
সাথে আর কথা না বলে সোজা রাইসার কাছে চলে গেলো।
আর এদিকে রিয়ান নিজেকে কোনো ভাবে কন্ট্রোল করে
মিষ্টার শামছুল হককে ফোন দিলো এবং রাইসার
অ্যাকসিডেন্টের ব্যাপারটা বললো। । আদঘন্টার ভিতরে
রিয়ানের বাড়ির সবাই চলে আসলো। মিথিলা এসেই
রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে - কাঁদতে বললো--- ভাইয়া
কীভাবে ভাবীর এই অবস্থা হয়েছে। রিয়ান মিথিলার
প্রশ্নটির কোনো উওর দিতে পারলোনা, অবশ্য দিবেই
কিভাবে কেননা সত্যটা জানলে তো মিষ্টার শামছুল হক
এখন আবার হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়বে। রিয়ান মিথিলার
প্রশ্নটিকে অবহেলা করে দেওয়ালের সাথে ঘেসে বসে
রইলো আর ভাবতে লাগলো---- কেন আমি এতো ভেঙ্গে
পড়ছি , কীসের জন্য, কার জন্য, কে হয় ও আমার, আমি কেন
কাঁদছি, আমি তো কখনো কাঁদতে পারতাম না, ইভেন সেদিন
ও তো একফোঁটা ও চোখের জল পড়েনি যেদিন রিয়া
আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো, তাহলে আজ কেন চোখ
দুটো আমার এতো কষ্ট দিচ্ছে, কেন? কিছুসময় পার হওয়ার
পর, সাঈফ রিয়ানের কাছে আসলো, রিয়ান সাঈফকে
দেখামাএ মুখটাকে নিচু করে ফেললো কেননা বারবার তার
নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। সাঈফ আসা মাএই সবাই
জিজ্ঞাসা করতে লাগলো --রাইসা এখন কেমন আছে?
সাঈফ কোনো উওর না দিয়ে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে এক
প্রকার কষ্টের হাসি হেসে রিয়ানকে উদ্দেশ্য করে
বললো--- সবাই তো জিজ্ঞাসা করলো রাইসার কথা, কই
তুমি তো রিয়ান জিজ্ঞাসা করলে না, কী জানতে
চাইবেনা ওর কথা, নাকি আজ ও নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়ে
যাবে। রিয়ান তখন ও কোনো কিছু বললো না। মিথিলা তখন
বলতে লাগলো--- ডক্টর ভাইয়া এখন স্বাভাবিক নয়, প্লিজ
বলুননা ভাবী কেমন আছে? দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাঈফ বললো
--- কিছু বলা যাচ্ছে না, মাথায় প্রচন্ড জোরে আঘাত
পেয়েছে, ওকে অটিতে নিয়ে যেতে হবে। কথাটা শুনা
মাএই রিয়ান সাঈফের সামনে গিয়ে দুহাত তুলে করুনার
দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো, রিয়ানের এরুপ দৃষ্টিতে সাঈফ বুঝে
ফেললো এর আড়ালে কতো ইতিহাস আর কতো না বলা কথা
লুকিয়ে আছে , সাঈফ মুচকি হাসি দিয়ে, রিয়ানের হাত
দুটোকে আকড়ে ধরে শান্ত কন্ঠে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলে
উঠলো--- চিন্তা করোনা। রিয়ান এমন একটা সিশুয়েসনে ও
সাঈফকে এমন শান্ত মানুষ রুপে দেখে বুঝতে পারলো,
পৃথিবীতে এখন ও কিছু মানুষ আছে যারা নামে নয় শুধু, কর্মে
ও একজন সত্যিকারের হিউম্যান। । সাঈফ রাইসাকে অটিতে
নিয়ে যাওয়ার সময় রিয়ান ওর চেহারার দিকে এক দৃষ্টিতে
তাকিয়ে রইলো, ওর মায়াবী, নিস্পাপ চেহারাটা যেনো
রিয়ানকে তখন ও বলছিলো--ভালো থাকবেন । অটিতে
নিয়ে যাওয়ার পর রিয়ান অটির সামনে দাড়িয়ে বারবার
ভাবতে লাগলো --- আমার কেন এতো কষ্টে হচ্ছে, ও তো
আমার কেউ নয় তাহলে কেন বারবার ওর খামখেয়ালী
পনাগুলো আমার চোখের সামনে ভাসছে। অটির দরজার লাল
বাতিটার দিকে তাকিয়ে রিয়ান অপেক্ষার প্রহর গুনতে
লাগলো, আর বুঝতে পারলো কিছু সময় আমরা খারাপ
পরিস্হিতি তে পড়ি আমাদের নিজেদের কারনে আর আমরা
সবসময় সেই মানুষগুলোকে অবহেলা করি যারা আমাদের
জন্য ভাবে, যারা আমাদের সুখের জন্য সব করতে পারে,সব।
অনেকক্ষণ পর, অটির লাইটটা বন্ধ হয়ে গেলো,লাইটটা বন্ধ
হতেই রিয়ানের বুকের মাঝে একটা স্বস্তি অনুভব হলো, এই
ভেবে যে শেষ অবদি আমার অপেক্ষার প্রহরটা সমাপ্তি
হলো। সাঈফ অটি থেকে বের হতেই রিয়ান সাঈফের হাতটা
আকড়ে ধরে বলে উঠলো --- ডক্টর রাই,রাইসা কেমন আছে।
লোকটির চোখেমুখে এতোক্ষণ নিজের কষ্টটাকে লুকিয়ে
রাখার যে শক্তি ছিলো তা ধীরে -ধীরে চুপসে গেলো,
বিষাদের ছায়া নেমে আসলো লোকটির মুখে আর তা দেখে
রিয়ানের চিন্তা আর বেশি বেড়ে গেলো, --- কী হলো কিছু
বলছেন না কেন? সাঈফ তাও কোনো জবাব দিলোনা,
মিথিলা তখন আর নিজেকে সামলাতে না পেরে সাঈফের
সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলো --- কী হলো আপনে কথা
বলছেন না কেন, ভাবী এখন কেমন আছে? -সাঈফ তখন
চোখের পানিগুলো ছেড়ে দিয়ে বললো ---- ওর
অপারেশনটা successful হয়েছে, বাট ও অ্যাকসিডেন্ট হওয়ার
সময় অতিরিক্ত কষ্ট পাওয়ার কারনে ও কোমায় চলে গেছে,
ও রেসপন্স করছেনা, আর --- আর কী? সাঈফ তখন আর
চোখের জলগুলো ধরে রাখতে পারলোনা, কান্নামাখা
কন্ঠে মিথিলাকে বললো-- আর কখনো রেসপন্স, করবে
কীনা সন্দেহ আছে। সাঈফের কথাগুলো শুনতেই রিয়ানের
বুকটা কেপে উঠলো, কেন সে জানেনা, শুধু মনে হলো বুকের
মাঝে কিছু একটা আর্তনাদ করছে। রিয়ান ঠাস করে নিচে
বসে পড়লো। কিছুসময় পর কী একটা ভেবে অটিতে গিয়ে
রাইসার কাছে গিয়ে ওর কানে ফিসফিস করে বলতে
লাগলো--- এই মেয়ে তোমাকে উঠতে ই হবে,আজ না হয়
কাল, একদিন তুমি ঠিক উঠবেই। আ,আর তোমার শেষ কথাটি
আমি রাখবো, আর আমার বাবাকে দেওয়া তোমার ওয়াদার
ও বেখালাফ হবেনা। এই বলে রিয়ান অটি থেকে বের হয়ে
গেলো। সেদিন থেকেই রিয়ান আবার নতুন করে বাচার
অনুপ্রেরণা পেলো, সবকিছু নতুন করে শুরু করলো। । ।
চারপাশের বাড়িটা আজ আলোক সজ্জায় সাজানো, হলুদ,
নীল, আর লাল বাতির স্পর্শে পুরো বাড়িটা আজ একটু
বেশিই আলোকিত দেখাচ্ছে। বাড়ির মানুষগুলো ও আজ
অনেক ব্যস্ত, কিন্তু কীসের এতো ব্যস্ততা। কীসের এতো
আয়োজন? মিসেস শায়লা বেগম আর শিলা রান্না ঘর থেকে
যেনো আজ বের হতেই পারছেনা, সামছুল হক বাড়ির কোথা
ও কোনো ক্ষুদ আছে কিনা তা ঘুরে- ঘুরে দেখছে,আর
মিথিলা একগাল হাসি মুখে রেখে উপরে যেতে লাগলো,
আর চেঁচিয়ে - চেঁচিয়ে রিয়ানকে ডাকতে লাগলো---
ভাইয়া, এই ভাইয়া। অতঃপর রিয়ানের দরজার সামনে গিয়ে
নক করতে লাগলো আর বলতে লাগলো --- কীরে ভাইয়া
আজকের দিন ও কী তুই এতো বেলা অবদি ঘুমোবি। ওপাশ
থেকে তখন উওর আসলো-- একটু দাড়া বোন আসছি। গলার
আওয়াজটি শুনতে পেয়ে মিথিলা শান্ত হয়ে গেলো,
কিছুসময় পর রিয়ান দরজা খুললো, রিয়ান দরজা খুলতেই
মিথিলা চমকে গেলো রিয়ানকে দেখে, পরনে নীল,
গোল্ডেন শেরোয়ানি, --- বেশ লাগছে ভাইয়া তোকে। ---
ধন্যবাদ মাই ডিয়ার সিস্টার। --- বাট ভাইয়া তুই আজ ও এতো
বেলা অবদি ঘুমোলি। ---- আরে না, রুম সাজাচ্ছিলাম। ---
রুম সাজাচ্ছিলি কিন্তু কার জন্য। --- বাহ! রে তুই জানিস না
বুঝি কার জন্য? মিথিলা রিয়ানের মুখ থেকে বাক্যটি শুনা
মাএই নিশ্চুপ হয়ে রইলো, কিছুসময় পর রিয়ানকে শান্ত কন্ঠে
বলতে লাগলো---আর কতকাল অপেক্ষা করবি ভাইয়া,
কতদিন আর এভাবে ঘর সাজাবি, কত দিন আর মিথ্যে আশা
নিয়ে মরা লাশটির কাছে যাবি। --- চুপ, চুপ মিথিলা এসব
বলতে নেই, আর কে মরা লাশ, ও আমার সাথে অভিমান
করেছে তাই হয়তো এভাবে আছে। তুই দেখিস ও আজ আমার
সাথে আসবে,আমার সাথে কথা বলবে। ---; প্রতিদিনেই তো
তুই এই কথাটি বলিস। --- এই আশাটিয়েই তো আমার সব
মিথি। যাইহোক আমি তাহলে এখন বের হই। --- মানে কী, তুই
এখনেই হসপিটালে যাবি। --- হুম, --- খেয়ে যাবিনা। ---
এসে খাবো এই বলে রিয়ান ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো,নিচে
নামতেই মিসেস শায়লা বেগম রিয়ানকে দেখা মাএই ওর
কাছে এসে ওর মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠলো -- বাবা যার
কাছে যাচ্ছিস, সে যেনে আজ সুস্থ হয়ে যায় তোর
অপেক্ষার যেনো অবসান ঘটে।। --- দোয়া করো মা। ---
প্রতিদিনেই তো এই দোয়াটি করি আর প্রতিদিন তুই আসার
অপেক্ষায় থাকি এই ভেবে যে এই বুঝি তুই হাসি মুখে ওর
হাতটা ধরে এই ঘরে ফিরবি । রিয়ান মায়ের কথার কোনো
উওর না দিয়ে ছলছল চোখে বাড়িতে থেকে বের হয়ে
গেলো। মনের মাঝে নানা আশা আর স্বপ্ন নিয়ে
হসপিটালের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো, তারপর ৩৪৫
নাম্বার কেবিনে গেলো, গিয়ে দেখে সাঈফ বসে আছে
সাঈফকে দেখা মাএই রিয়ান বললো--- মামা, চলে এসেছি।
--- এই তোমার আসার সময়, সেই অনেক্ষণ অবদি তোমার জন্য
বসে আছি। -- স্যরি মামা আসলে জ্যামের কারনে আসতে
একটু দেরি হয়ে গেছে। --- ব্যাপার না, এবার তুমি তোমার
ওয়াইফের সাথে থাক, আমি চললাম।সাঈফ চলে যেতেই
রিয়ান ক্রমশ কেবিনের কাছে গেলো, তারপর রাইসার
মাথায় হাত দিয়ে ছলছল চোখে বলতে লাগলো---আজকের
দিন ও এভাবে নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে রইবে, উঠবেনা তুমি জানো
আজকে কী? আজ আমাদের First Anniversary, এ দিনেই তো
তুমি এই ইডিয়েট ছেলেটাকে ঠিক করার জন্য ওর হাতটা
ধরেছো। আর এ দিন ও তুমি আমার সাথে কথা বলবেনা,
একটা লাশের মতো শুয়ে থাকবে, তুমি জানো আজ আমি
তোমার জন্য পুরো বাড়িটা সাজিয়েছি, মাকে বলে এসেছি
আজ তোমাকে আমি আমার সাথে নিয়ে যাবো। অবশ্য
প্রতিদিনেই মাকে এই আশ্বাসটা দিয়ে আসি তবে আজকে
অন্তরের অন্তস্থল থেকে কথাটা বলে এসেছি। উঠোনা,
আমার সাথে কথা বলোনা। হঠ্যাৎ রিয়ান নিশ্চুপ হয়ে
গেলো, তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো-- এতো
অভিমান তোমার যে একটা বছর পেরিয়ে গেলো, অথচ তুমি
এখন সেই পুতুলের মতো নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছ ও। তুমি জানো?
প্রতিদিন বাবা ভাবে এই বুঝি তুমি সুস্থ হয়ে বাবাকে বলবে
-- আপনে কোনো চিন্তা করবেননা বাবা, আপনার ছেলে
আবার আগের মতো ঠিক হয়ে যাবে। মিথি প্রত্যহ ভাবে এই
বুঝি তুমি ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরবে। আর আমি তোমার সুস্থ
হওয়ার অপেক্ষায় প্রত্যহ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলি। কিন্তু
তুমি? আমাদের অপেক্ষাটার অবসানেই ঘটাচ্ছনা, আচ্ছা
তোমার এতো অভিমান, এতো আমার উপর রাগ যে সেদিন
সেই যে বললাম --- চলে যেতে তাই আজ ও নিশ্চুপ হয়ে
রয়েছে। গত এক বছর ধরে প্রতিদিন তোমার কাছে এসে
তোমার সাথে আমি নিজেই শুধু কথা বলি কিন্তু তুমি একবার
ও আমার সাথে কথা বলোনা, তুমি বুঝো না রাইসা এতে
আমার খুব কষ্ট হয়। আচ্ছা রাইসা তোমার এভাবে শুয়ে
থাকতে কষ্ট হয়না, প্লিজ রেসপন্স কর, প্লিজ। রিয়ানের
কথাগুলো শুনে রাইসার চোখ জলে টলটল করতে লাগলো,
রিয়ান তা দেখে অভিমানী কন্ঠে বললো--- এতই যখন আমার
কষ্ট দেখে তোমার কষ্ট হয় তাহলে কেন উঠছো না, কেন
আমার হাতটা আকড়ে ধরছো না, রাস্তায় হাটতে গিয়ে যখন
হোচট খেলাম তখন তুমি আমার হাতটা আকড়ে ধরে আমাকে
পথ দেখিয়েছো আর এখন মাঝপথে ছেড়ে দিয়েছো, তাহলে
তোমার আর রিয়ার মধ্যো কী পার্থক্য রইলো। রাইসার অশ্রু
তখন গড়িয়ে রিয়ানের হাতে পড়লো, রিয়ান তখন বললো--
না তুমি ভেবোনা আমাকে নিয়ে রাইসা, সেদিন যখন ডক্টর
বলছিলো তুমি কোমায় চলে গেছো, তুমি কখনো আর
রেসপন্স করবে কীনা সন্দেহ আছে, কথাটি শুনে সেদিন
হয়তো আমি ক্ষণিকের জন্য ভেঙ্গে পড়েছিলাম, কিন্তু
পরক্ষণে আমি নিজেকে বুঝিয়েছি এই বলে যে--- যারা
অন্যদের বাচার অনুপ্রেরণা দেয় তার কখনোই এতো সহজে
মরে যায় না। আর এই বিশ্বাসে, দেখতে- দেখতে একটা বছর
পার করে দিলাম। তুমি তো জানো রাইসা আমি এখন আর
সিগারেট খাইনা,এখন আর মদ খাইনা এখন আর রাত ও
জাগিনা, আর ওই তিন রাস্তার মোড়ে ও বসে থাকিনা। কেন
জানো? কারন তোমার শেষ কথাটি ছিলো --- ভালো
থাকবেন। আর সেই কথাটিই আমাকে নতুন করে জিবন শুরু
করতে বাধ্য করেছে, আর ভালো থাকার ও চেষ্টা
করছি,এবং নিজের কাছের মানুষগুলোকে ও ভালো রাখার
চেষ্টা করছি। জানো রাইসা এখন আমি অনেক কিছু বুঝে
গিয়েছি সবকিছুর সাথে মানিয়ে নিয়ে চলতে শিখে গেছি।
যখনি এখন আবেগের বর্শে আবার জিবনকে থামিয়ে দিতে
চায় মন, তখনি তোমার কাছে চলে আসি তোমার এই নিস্পাপ
চেহারা দেখে আমি আবার বাচার অনুপ্রেরণা পাই। সেদিন
হয়তো রাইসা আমি তোমার কথাগুলোর মূল্য বুঝতে পারিনি
কিন্তু এখন বুঝতে পেরেছি। আসলে আমরা সত্যিকারের যখন
কেউকে ভালোবাসি তখন ভালোবাসার মানুষটিকেই ভুল
নির্বাচন করি। আর যখন কেউ আমাদের সত্যিকারের
ভালোবাসে তখন আমরা না তার ভালোবাসাটা বুঝিনা, ,
বুঝতে পারি তখনি যখন সে আমাদের ছেড়ে দূরে চলে যায়।
যেমন এখন আমি বুঝতে পেরেছি তোমার নিরবতার কারনে
আর রিয়া ও হয়তো বুঝতে পেরেছে তাইতো কয়েকদিন আগে
আমাকে ফোন দিয়ে কাঁদতে - কাঁদতে বললো-- ও আমার
কাছে ফিরে আসতে চায়। কিন্তু এ কথাটি শুনে না সেদিন
আমি ও একটু ও খুশী হয়নি, তিনটা বছর যার জন্য মরা লাশের
মতো ছিলাম সে আমাকে ফোন দিয়েছে, সেই অনুভূতিটা
আমার ভিতর কাজ করেনি কেন জানো বিকজ আমার সব
অনুভূতি আর আবেগ, ভালোবাসা শুধু তোমায় ঘিরে। আসলে
আমাদের জিবনে সুখকর অনুভূতির ঘাটতি থাকে বিধায়
আমরা জিবন পথ চলতে গিয়ে বারবার ভালোবাসাটাকে
খুজি, আর ভালোবাসা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বলতে কিছু
নেই, যেই ভালোবাসায় হাজার কষ্টের মাঝে ও আমরা
সুখকর অনূভুতি খুজে পাই সেটাই প্রথম এবং শেষ
ভালোবাসা, আর বাকি সবকিছু আবেগ কিংবা একটু
ভালোলাগা ছাড়া আর কিছুই নয়। আজ মনে হচ্ছে সেদিন
রিয়া আমাকে ছেড়ে চলে গিয়ে অনেক ভালো করেছে,
কেননা এই পৃথিবীতে এমন অনেক স্বামী- স্ত্রী আছে
যাদের ভিতর ভালোবাসা শব্দটি নেই কিন্তু সমাজ,
বাস্তবতার কারনে একজন আরেকজনের সাথে মিথ্যে
অভিনয় করে জিবনটা পার করে দিচ্ছে। কিন্তু রিয়া আমার
সাথে সে নাটকটা করলোনা, যদি করতো তাহলে কখনোই
জানতেই পারতাম না যে ও আমাকে কখনোই
ভালোবাসেনি, আমি শুধু মাএ ওর আবেগ ছিলাম যার মেয়াদ
ছিলো তিন বছর। আর ভালোবাসা জিনিসটা কখনো সময়ে
সাথে- সাথে কমেনা বরং একটু একটু করে বাড়ে। যা
মানুষকে আর দীর্ঘ দিন বাচার অনুপ্রেরণা দেয়। আর সেই
অনুপ্রেরণা নিয়েই তো দুজন একসাথে হাতে - হাত রেখে
জিবনের সমস্ত জরা- জীর্ণতা আর বাধা অতিক্রম করে। ---
আর কত ওই পুতুলের সাথে কথা বলবে রিয়ান? সাঈফের গলার
আওয়াজটি পেতেই রিয়ান নিশ্চুপ হয়ে গেলো,কিছুসময়
রাইসার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো--- যতদিন ও
রেসপন্স না দেয়। --- ওর আর রেসপন্স, এই আশা নিয়ে তো
এক বছর পার করেই দিয়েছো। যাও বাড়ি যাও। এই বলে
সাঈফ চলে গেলো। রিয়ান তখন রাইসার চোখের জলগুলো
মুছতে লাগলো, আর নিলিপ্ত স্বরে বলতে লাগলো---
আজকে ও খালি হাতে ফেরাবে। তারপর রিয়ান রাইসার
কপালে হাত বুলিয়ে বলে উঠলো--- আসি। কথাটি বলে
রিয়ান দাড়িয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা দিতেই মনে হলো
কেউ ওর হাতটাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। নিছক কল্পনা
কিংবা স্বপ্ন মনে করে রিয়ান আবারো চলে যেতে গেলেই
সেই অনুভূতিটটা আবারো ফিল হলো। রিয়ানের চোখ- মুখে
সুখের আমেজ নেমে আসলো, পিছন ফিরে তাকালো,
তাকাতেই দেখে রাইসা হাতটা আকড়ে ধরেছে, রিয়ান
ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে পারলোনা, তাই রাইসার মাথার
পাশে গিয়ে বসে, চোখ দুটো বন্ধ করলো নিছক স্বপ্ন ভেবে,
হঠ্যাৎ মনে হলো কেউ তাকে বলছে--- নিয়ে যাবেনা
আমায় তোমার সাথে। কৌতুহল বর্শে চোখ খুলতেই রিয়ান
দেখলো, রাইসা ওকে কথাটি বলছে। ব্যাপারটা দেখে
রিয়ান জোরে,জোরে শ্বাস ছাড়লো, আর সেই এক একটা
শ্বাস যেনো রিয়ানের এক বছরের অপেক্ষার প্রহর গুনার
প্রমান। রিয়ান রাইসার কপালে আলতো করে একটা চুমু
দিয়ে বললো--- একটা বছর পর আমার অপেক্ষার সমাপ্তি
হলো, রাইসা আমি কী কোনো স্বপ্ন দেখছি। রাইসা তখন
আস্তে- আস্তে বললো--- আমি রিয়া নয় যে হোচট
খেয়েছো বলো মাঝপথে তোমায় ছেড়ে চলে যাবো।

Comments

Popular posts from this blog

ভালবাসার সঙ্গা:-

ভালোবাসার সংজ্ঞা দিয়েছেন বিভিন্ন দার্শনিক বিভিন্ন ভাবে । ব্যক্তি ভেদে এই সংজ্ঞা বদলে যায় , যেমন বিখ্যাত গণিতবিদ পীথাগোরাস কে আমরা সবাই কম-বেশি চিনি। একবার কোন এক “ ভালোবাসা দিবস” এ এক লোক পীথাগোরাস কে জিজ্ঞেশ করেছিল, আপনার কাছে ভালবাসা’র সংজ্ঞা কী হতে পারে? পীথাগোরাস কোনো কথা না বলে খাতা-কলম নিয়ে বসে পরলো। তারপর কিছুক্ষন পর বলল, আমার কাছে ভালবাসা হচ্ছে ২২০ এবং ২৮৪ এর উৎপাদক ।তখন লোকটি বলল , কীভাবে? পীথাগোরাস বলল , ২২০ এর উৎপাদক হলো ১,২,৪,৫,১০,১১,২০,২২,৪৪,৫৫,১১০ এবং ২৮৪ এর উৎপাদক হলো ১,২,৪,৭১,১৪২ এখন আপনি যদি ২২০ এর উৎপাদক গুলোকে যোগ করেন তাহলে যোগফল হবে ২৮৪ (১+২+৪+৫+১০+১১+২০+২২+৪৪+৫৫+১১০=২৮৪) এবং ২৮৪ এর উৎপাদক গুলোকে যোগ করেন তাহলে যোগফল হবে ২২০ (১+২+৪+৭১+১৪২=২২০) কী! মজার না? আবার দেখুন আমাদের দেশের কবি রফিক আজাদের একটা কবিতা আছে, "ভালোবাসার সংজ্ঞা" ভালোবাসা মানে দুজনের পাগলামি, পরস্পরকে হৃদয়ের কাছে টানা; ভালোবাসা মানে জীবনের ঝুঁকি নেয়া, বিরহ-বালুতে খালিপায়ে হাঁটাহাঁটি; ভালোবাসা মানে একে অপরের প্রতি খুব করে ঝুঁকে থাকা; ভালোবাসা মানে ব্যাপক বৃষ্টি, বৃষ্

আমি নিজের চোখকে বিস্বাস করাতে পারছিলামনা।

আমি নিজের চোখকে বিস্বাস করাতে পারছিলামনা। - রাইসাঃ কি তুমার বিস্বাস হচ্ছেনা,আমি তুমার সামনে?? - আমিঃ তুমাকে কি আমি স্পর্শ করে দেখতে পারি? - রাইসাঃ আমি কি তুমাকে নিষেদ করেছি! - আমি আমার হাতটা রাইসার হাতের উপরে রাখলাম,আমার ভিতরে অজানা একটা ভাল লাগা কাজ করলো,বুকের ভিতরটা মোচর দিয়ে উঠলো! - এরি নাম হয়তো ভালবাসা! - আমি শুধু মুগ্ধ হয়ে রাইসাকে দেখছি।। - কখন যে সময় পেরিয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না।।।হঠাৎ রাইসার ডাকে আমার হুশ্ ফিরলো! - রাইসাঃএখন আমাকে যেতে হবে শাকিল। - আমিঃ কেন?আরেকটু থাকোনা! - রাইসাঃ না একটু পরে আযান হবে,আমি আর থাকতে পারবনা, দিনের আলো আমি একদম সহ্য করতে পারিনা।আমি যাচ্ছি ভাল থেকো। রাইসা চলে গেলো। - ঘরটা আগের মতো আবার অন্ধকার হয়ে গেলো।শুধু একটা মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছি! - - তার পর বেশ কিছুদিন কেঁটে গেলো,রাইসা আমাকে কল করছে না,দেখা করতেও আসছেনা।। - ভাবলাম ও হয়তো আমাকে ভুলে গেছে! মনের অজান্তেই কখন রাইসাকে আমি ভালবেসে ফেলেছি,জানিনা। - খুব কষ্ট হচ্ছিলো! রাইসাকে ছাড়া আর কোন কিছু ভাবতে পারছিনা আমি। হোক না সে অন্য কোন জাতি!আমি তু তাকে ভালবাসি আর ভালবাসা

ভারতে কলেজ ছাত্রীর সাথে অস্লিল কর্মের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ারকরল বন্ধু।

ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে এক তরুণীকে হেনস্তা করে ভিডিও ছেড়ে দিয়েছে এক যুবক। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছবি : এনডিটিভি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে ১৯ বছর বয়সী এক কলেজছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার পর ভিডিও ধারণ করে তা বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে এক যুবক। এ ঘটনায় ছাত্রীর ছেলেবন্ধু ওই যুবকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চলতি বছরের আগস্টে এ ঘটনা ঘটে। গত মঙ্গলবার ছাত্রীর বাবার করা অভিযোগের ভিত্তিতে অন্ধ্রপ্রদেশের প্রকাসম জেলা থেকে  তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। Advertisement ভিডিওতে দেখা যায়, ওই তরুণী হামলাকারীদের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে কাকুতি-মিনতি ও আর্তনাদ করছেন। কিন্তু হামলাকারীরা তাঁর পোশাক অনাবৃত করে ধর্ষণের চেষ্টা করছে। ওই সময় হামলার শিকার তরুণীর পাশে থাকা আরেক মেয়েকে ধরার প্রাণপণ চেষ্টা করছিল। ওই মেয়েটি তরুণীকে বাঁচাতে সামান্য চেষ্টা করেছেন। অন্ধ্রপ্রদেশের পুলিশের ভাষ্য, ওই কলেজছাত্রী ও তাঁর এক বন্ধু বি সাইয়ের (ছেলেবন্ধু) সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। বি সাইয়ের সঙ্গে এক বছর আগে থেকে তরুণীর পরিচয় ছিল। মন্দিরে যাওয়ার পর বি সাইয়ের বন্ধু কার্তিক (যে তরুণীর স